Search

বিল খুকশিয়ায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজে কৃষকের হাসি

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের কেশবপুরের বিল খুকশিয়ায় মাছের ঘেরের বেড়িতে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ উৎপাদনের আশা করছেন কৃষকেরা।


বিল খুকশিয়ায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজে কৃষকের হাসি

বিল পাড়ের ৯ গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক ওই বিলে তরমুজ আবাদ করেছেন। মাছের ঘেরের বেড়িতে শত শত তরমুজ উৎপাদনের দৃশ্য এখন অন্য কৃষকদের কাছেও অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। তরমুজ আবাদ করে ওই বিলের কৃষকেরা এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এবার ওই বিলের কৃষকরা প্রায় ২ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
বিল খুকশিয়া কেশবপুর শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে সুফলাকাটি ইউনিয়নের শ্রীহরি নদীর তীরে অবস্থিত। ওই বিলে দীর্ঘ ১৮ বছর জলাবদ্ধ থাকায় কৃষকেরা ফসল ফলাতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে বিলটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে জোয়ার-আঁধার (টিআরএম) প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প শেষে কৃষকরা বিলটিতে মাছের ঘের তৈরি করেন। আর এবার ওই বিলে ঘেরের বেড়িতে কানাইডাঙ্গা, আড়ুয়া, কাঁকবাধাল, সারুটিয়া, গৃধরনগর, হাড়িয়াঘোপ, ডহুরি, কালিচরণপুর ও নারায়ণপুর এলাকার তিন শতাধিক কৃষক তরমুজ চাষ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। আকারভেদে একেকটি তরমুজের ওজন হয়েছে ৫ থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে গ্রীষ্মকালীন এ সুস্বাদু তরমুজ।
সরেজমিন বিল খুকশিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, বিলটিতে ঘেরের পানিতে মাছ চাষের পাশাপাশি অধিকাংশ ঘেরের বেড়িতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। ঘেরের পানির উপর তৈরি করা মাচায় এসব তরমুজ ঝুলছে। যতদূর চোখ যায় ততদূর দেখা মেলে তরমুজের। কৃষকেরা ঘের পাড় থেকে কিংবা নৌকায় বসে এসব তরমুজ খেত পরিচর্যা করছেন। এ ছাড়া পরিপক্ক তরমুজ কেটে বিক্রির জন্য নৌকায় করে বিল পাড়ে আনছেন।
তরমুজ কাটার সময় কৃষক বাবু হোসেন বলেন, মাছের ঘেরের বেড়িতে লাগানো প্রায় এক হাজার তরমুজের গাছ থেকে প্রথমবার ৪৫ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এ বছর তিনি আরও দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। কৃষক মিলন হোসেন বলেন, প্রায় ৭ বিঘা ঘেরের বেড়িতে তরমুজ আবাদ করেছেন। আনুমানিক ৩ লাখ টাকা ওই তরমুজ বিক্রি হবে। গাছ লাগানোর মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে স্বল্প খরচে তরমুজ আবাদে কয়েক গুণ লাভ করা সম্ভব বলে তিনি জানান। কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এ পর্যন্ত তিনি ৭০ মণ তরমুজ প্রতি কেজি সাড়ে ৩৭ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এখনো গাছে প্রচুর তরমুজ রয়েছে। খরচ বাদে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
বিল পাড়ের তরমুজ ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন মিন্টু বলেন, বিল খুকশিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন তিনি ১০০ থেকে ১৫০ মণ তরমুজ কিনে ছোট পিকআপে করে ঢাকা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে থাকেন। এ পর্যন্ত ১৫ গাড়ি তরমুজ তিনি পাইকারি বিক্রি করেছেন। এখন প্রতি মণ তরমুজ তিনি ১৪৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা দরে কিনেছেন। তার মতো আরও অনেকেই কৃষকদের কাছ থেকে তরমুজ কিনে বিভিন্ন স্থানে পাঠান।
এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, সুফলাকাটি ইউনিয়নের বিল খুকশিয়ায় ঘের পাড়ের প্রায় সাড়ে ১০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা তরমুজের ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। এবার ওই বিল থেকে প্রায় ৫১৩ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা প্রায় ২ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন। এ বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগামী বছর তরমুজ আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে।