কেশবপুরে দ্বিতল ছাদ বিশিষ্ট ঈদগাহে বৃহত্তম ঈদুল আজহার জামায়াত অনুষ্ঠিত
ইসরাফিল হোসেন, কেশবপুর: ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অনুপম শিক্ষা নিয়ে ফিরে এসেছে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব—পবিত্র ঈদুল আজহা। লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ এবং আত্মকেন্দ্রিকতার পশুস্বভাব পরিহার করে আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এই বার্তা নিয়েই সারাদেশের মতো যশোর জেলার কেশবপুরেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে ঈদুল আজহা।

শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টায় কেশবপুর উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়নের কলাগাছি এলাকার দ্বিতল ছাদ বিশিষ্ট ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় উপজেলার সর্ববৃহৎ ঈদের জামায়াত। সুশৃঙ্খল ও পরিপাটি আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত এই জামায়াতে অংশগ্রহণ করেন হাজারো ধর্মপ্রাণ মুসলমান। পবিত্র ঈদের নামাজে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা আব্দুর রশিদ। নামাজ শুরুর পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোক্তার আলী।
জামায়াতে উপস্থিত মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন। নামাজ শেষে অনেকে প্রিয়জনদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরস্থানের পথে রওনা হন। তারা অশ্রুসজল চোখে হারানো স্বজনদের রুহের মাগফিরাত কামনায় আল্লাহর দরবারে হাত তোলেন।
ঈদুল আজহার পেছনে রয়েছে এক অনন্য ত্যাগের ইতিহাস। প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনে হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন নিজের প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত হন, তখন আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে একটি দুম্বা তার স্থলে কোরবানি হয়ে যায়। এই আত্মত্যাগের স্মরণেই মুসলিম উম্মাহ জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পশু কোরবানি করে থাকে।
এই উৎসব কেবল আনন্দ বা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মুসলমানদের জন্য এক আত্মপরিশুদ্ধির পথ। আল্লাহর নির্দেশ পালনে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সঁপে দেওয়ার শিক্ষা দেয় ঈদুল আজহা। সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ, তবে এই আনন্দে দরিদ্র ও অসহায় মানুষকেও অংশীদার করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। তাই কোরবানিকৃত পশুর মাংসের এক-তৃতীয়াংশ দরিদ্রদের মাঝে বিতরণের নির্দেশ রয়েছে। পাশাপাশি, চামড়া বিক্রির অর্থও দান করা হয় বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে।
কেশবপুরে এবারের ঈদ আয়োজন ছিল সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন এবং সেচ্ছাসেবকরাও জামায়াতের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ধর্মীয় এই বৃহৎ উৎসবকে কেন্দ্র করে কেশবপুর জুড়ে বিরাজ করছিল আনন্দঘন পরিবেশ। শিশুদের হাসি, নতুন জামা-কাপড়, কোরবানির প্রস্তুতি, এবং সামাজিক সম্প্রীতির দৃশ্য—সব মিলিয়ে ঈদ যেন এক সার্বজনীন আনন্দের উৎসব হয়ে ওঠে।