Search

পুলিশের চাক‌রি করে সকল মানুষকে সন্তুষ্ট করা খুবই ক‌ঠিন

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক বলেছেন, পুলিশের চাক‌রি করে সকল মানুষকে সন্তুষ্ট করা খুবই ক‌ঠিন। আল্লাহ য‌দি কাউকে ঐশ্ব‌রিক ক্ষমতা দে‌ন হয়তোবা তার দ্বারা সম্ভব। বাংলাদেশে বা পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে অনেকগুলো মানুষকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়


পুলিশের চাক‌রি করে সকল মানুষকে সন্তুষ্ট করা খুবই ক‌ঠিন

শনিবার (৩১ মে) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নতুন করে কুষ্টিয়া মডেল থানার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মো. রেজাউল হক। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। 

ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে কুষ্টিয়া মডেল থানা‌য় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে থানার ভেতরের দরজা, জানালা, আসবাবপত্র, নথিপত্র, সহ সকল জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া কুষ্টিয়া মডেল থানা সংস্কার করা হয়েছে। থানার দরজা-জানালা ও ভবন সংস্কার করা হয়েছে। নতুন নতুন আসবাবপত্র আসবাবপত্রসহ চালু করা হয়েছে পুলিশ সদস্যদের আবাসিক সুবিধা।

বিজ্ঞাপন

 

কু‌ষ্টিয়া মডেল থানার কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে থানা চত্বরে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করে জেলা পু‌লিশ। কু‌ষ্টিয়ার পু‌লিশ সুপার মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অ‌তি‌থি ছিলেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক।

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক এসময় আরও বলেন, সঙ্গত কারণে আমরা খুলনা রেঞ্জে কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টরদের লটা‌রির মাম্যমে পো‌স্টিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদন্নোতিও করা হবে সব‌কিছু বিবেচনা করে। বাংলাদেশ পুলিশের কেউ অপরাধ করলে সেটা তার ব্যক্তিগত দায়, প্রতিষ্ঠানের দায় নয়।

বিজ্ঞাপন

 

তি‌নি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আপনারা যে সেবাটা চান তা আমরা দেওয়ার চেষ্টা কর‌ছি। আমরা যারা কাজ কর‌ছি তাদের ভুলভ্রান্তি হতে পারে। ভুলটা ইনটেনশনা‌লি না‌কি কাজ করতে গিয়ে মানুষ হিসেবে যে ভুল কর‌ছি সেটা। মানুষ হিসেবে সাধারণ ভুল হলে সমাজ বা রাষ্ট্রের কোনো ক্ষ‌তি হয় না। আর য‌দি ইনটেনশনা‌লি ভুল হয় তাহলে আমাদের টলারেন্স জিরো।

গণঅভ্যুত্থানে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার তদন্ত কতদূর এগিয়েছে এমন প্রশ্নে ডিআইজি বলেন, মামলাগু‌লো যে শুধু রেঞ্জ অফিস ম‌নিট‌রিং করে তা নয়। পু‌লিশ হেডকোয়ার্টারও ম‌নিট‌রিং করে। এর কার্যক্রম অনেকদূর এগিয়েছে। আশা ক‌রি আমাদের তদন্ত সুষ্ঠ ও সুন্দর হবে। যারা অপরাধী তাদের যেন বিচার হয় সেটা মাথায় রেখে তদন্তে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।

কোরবানি ঈদের পশুর চামড়া যাতে সীমান্ত দিয়ে পাচার না হয় সেজন্য দৌলতপুর উপজেলার দিকে চামড়াবহনকারী যেকোনো পরিবহনকে আটকিয়ে পুলিশকে জানানোর আহব্বান জানান তি‌নি।

কু‌ষ্টিয়ায় দীর্ঘদিন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন‌ অবস্থান করেছে এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোন তথ্য ছিল কিনা জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, আমাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। পু‌লিশ সব সময় সব পারবে এমনটাও না। তবে যে সংস্থায় সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করুক পুলিশের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সাথে বা‌ড়ির মালিকদের বা‌ড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় সর্তকর্তা অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।

সুধী সমাবেশে কু‌ষ্টিয়া জেলা বি‌এন‌পির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্য স‌চিব প্রকৌশলী জা‌কির হোসেন সরকার, কু‌ষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন, কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজাউদ্দিন জোয়ার্দার, মুফতি আমীর হামজা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কু‌ষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্য স‌চিব মুস্তা‌ফিজুর রহমান, কু‌ষ্টিয়া জেলা গণঅ‌ধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক, নাগ‌রিক ক‌মি‌টির প্রতি‌নি‌ধি আলমাস মামুন, কু‌ষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সস্পাদক জুবায়ের রিপনসহ আরও অনেকে।

এ সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, গণঅ‌ধিকার প‌রিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নাগ‌রিক ক‌মি‌টির প্রতি‌নি‌ধির বক্তব্যের বিরোধিতা করে সমাবেশস্থলে হট্টগোল শুরু করেন বিএন‌পির নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে কু‌ষ্টিয়া জে‌লা বিএন‌পির আহ্বায়ক ক‌মি‌টির সদস্য আল আমিন কানাই, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, যুবদল নেতা শরীফসহ বেশ কয়েকজন তাদের দিকে তেড়ে যান। পরে পু‌লিশ ও উপ‌স্থিত জনতা প‌রি‌স্থি‌তি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিএন‌পি নেতা আল আমিন কানাই বলেন, আন্দোলনে সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করেছি আমরা। ৫ আগস্টের পর পুলিশকে আমরা শেল্টার দিয়ে কাজে ফিরিয়েছি আর পুলিশের প্রোগ্রামে আমাদেরকে বলা হয় না। আবার বিএন‌পির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয় দুই দিনকার ছেলেপেলে।

কামাল উদ্দিন বলেন, মঞ্চে বৈষম্যবি‌রোধী ছাত্রদের উঠিয়ে আমাদেরকে সামনে বসিয়ে রাখা অপমানজনক। আবার এরা বিএন‌পি বিরোধিতা করে বক্তব্য দেয়। পুলিশকে আমি সহযোগিতা করেছি। অথচ আমাদের বলা হয়‌নি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্যান্য থানার মতো কু‌ষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর ১২ আগস্ট শহরের আমলাপাড়ায় অব‌স্থিত সদর ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে থানার কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ। এরপর পোড়া ভবন সংস্কারের কাজও শুরু হয়।

এসময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, পুলিশের কর্মকর্তা, কুষ্টিয়ার সকল থানার ওসি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ছাত্রজনতা সহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।