শখ থেকেই সফল উদ্যোক্তা সারওয়ারী
শখের বসে মাত্র একটি শাড়িতে হাতের কাজ দিয়ে যাত্রা শুরু করেন রাজবাড়ীর সারওয়ারী খাতুন। এখন তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তিনি স্বপ্ননীর মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। যেখানে শতাধিক নারীকে হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। পাশাপাশি নারীদের আত্মকর্মসংস্থান ও নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি এবং নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করায় পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সমবায়ী, জয়িতাসহ অনেক পুরস্কার।

সারওয়ারী খাতুনের জন্ম রাজবাড়ী জেলা শহরের ভাজনচালা এলাকায়। তার প্রতিষ্ঠানে তৈরি হচ্ছে স্কার্ট, কটি, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, শাড়ি, ফ্রক, বিছানার চাদর, ফতুয়া ও নকশি কাঁথাসহ বাচ্চাদের নানা রকমের পোষাক। এসব পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন ভারতেও রপ্তানি হচ্ছে। বহুগুণের অধিকারী সারওয়ারী খাতুন শুধু হস্তশিল্পই নয় বাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন খাবার হোটেল। এই খাবার হোটেলের রান্নাও তিনি নিজে করেন।
সারওয়ারী খাতুন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই হাতের কাজ জানতাম। শখের বসে একবার নিজের হাতে একটি শাড়ির কাজ করি। শাড়িটি আমার পরিচিত একজন খুব পছন্দ করেন এবং তিনি অনুরোধ করেন শাড়িটি যেন তার কাছে বিক্রি করি। পরে আমি তার কাছে শাড়িটি ৬০০ টাকায় বিক্রি করি। তখন আমার ২০০ টাকা লাভ হয়। সেই থেকে শাড়ি তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। এ চিন্তা থেকেই এক-দুইটা করে শাড়ির কাজ করা শুরু করি।
তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে ২০ জন মহিলা নিয়ে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় মহিলাদের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ভাজনচালা মহিলা সমবায় সমিতি গঠন করি। সমবায় সমিতি গঠনের পর বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড থেকে বুটিক্স, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ও হস্ত শিল্পের উপর শারীরিক ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং সেখান থেকে ঋণ নিয়ে স্বপ্ননীর মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত শতাধিক নারীকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিয়ে হস্ত শিল্পের ওপর পারদর্শী কর্মী হিসেবে গড়ে তুলেছি। তারাও আমার কাছ থেকে কাজ শিখে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার কাছ থেকে যারা কাজ শিখেছেন তারাও আমার মতো ব্যবসা করতে চান। আমি তাদের ব্যবসার বিষয়ে উৎসাহিত করি। এক সময় আমার সংসারে টানাপোড়ন ছিল। এখন আমি এই কাজ করে আমার সংসার খুব ভালোভাবে চালাতে পারছি। আগের সেই টানাপোড়ন এখন আর নেই। আমি চাই মহিলারা বাসায় বসে না থেকে, এদিক ওদিক না ঘুরে তারা আমার মতো কাজ শিখে কাজ করুক।
রেহেনা পারভীন নামে এক নারী বলেন, সারওয়ারী খাতুনের স্বপ্ননীর বুটিক থেকে আমি কাজ শিখেছি। কাজ শেখার পর ১৫/১৬ বছর ধরে তার ওখানে কাজ করছি। এখানে কাজ করে আমি যে টাকা আয় করি সেটা দিয়ে আমার সংসার খুব ভালোভাবে চলে।
হোসনে আরা নামে এক নারী বলেন, আমি ১৯৯৬ সালে সারওয়ারী খাতুনের কাছ থেকে হাতের কাজ শিখি। তার কাছ থেকে কাজ শিখে ভালোই উপার্জন হতো। তাই পরে আরও কিছু নারীকে তার কাছে নিয়ে আসি এবং তিনি তাদেরকেও কাজ শেখান। পরে তিনি আমাদেরকে নিয়ে একটি দল গঠন করেন। মহিলারা যে ঘরে বসেও কিছু করতে পারে আমি সেটা তার কাছ থেকেই শিখেছি। তিনি এসব কাজের ফাঁকেও আরও নানা রকমের কাজ করে থাকেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সমীর কুমার সেন বলেন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন তার মধ্যে সারওয়ারী খাতুন একজন। সারওয়ারী খাতুন শুধু নিজে স্বাবলম্বী হননি, তার কাছ থেকে কাজ শিখে অনেক নারীও আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। নারীদের আত্মকর্মসংস্থান ও নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি এবং নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করায় তিনি সমবায়ী ও জয়িতা পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।