মহাসড়কে সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে সোনালু ফুল
গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে মহাসড়কে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল। এমন রূপে মুগ্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশে চার লেনের বিভাজকে যে কারও চোখ আটকে যাবে। অনেকেই গাড়ি থামিয়ে সেলফি তুলছে কেউ আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য ভিডিও বানাচ্ছেন।

তুলছে কেউ আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য ভিডিও বানাচ্ছেন।
কিশোরীর কানের দুলের মতো বৈশাখী হাওয়ায় দুলতে থাকে হলুদ-সোনালি রঙের থোকা থোকা ফুল। আবার ফুলের ফাঁকে দেখা যায় লম্বা ফল। হলুদবরণ সৌন্দর্যে মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশ। হলুদ সোনালি রঙের অসংখ্য ফুল সারা গাছজুড়ে মতো ঝুলতে থাকে। ফুলগুলোর পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। সবুজ রঙের একমাত্র গর্ভকেশরটি কাস্তের মতো বাঁকানো।
সরজমিনে গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিয়াবাজার এলাকায় দেখা যায়, লালবাগ রাস্তার মাথা থেকে শুরু করে চান্দ্রশী ওকালিকাপুর পযন্ত সারি সারি গাছে সোনালু ফুল। আশপাশে এলাকা থেকে যুবকরা বাইকে করে মহাসড়কের এসে সোনালু ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছে। মহাসড়কের মিয়াবাজার এলাকায় শাহাজাহান নামে এক কাভার্ডভ্যান চালক সোনালু ফুলের ছবি তুলছেন।তিনি বলেন, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সোনালু ফুল ফুটেছে, তবে মিয়াবাজার এলাকায় গাছগুলোতে বেশি ফুল থাকায় সুন্দর লাগছে। তাই লোভ সামলাতে না পেরে গাড়িটা সড়কের পাশে রেখে কিছু ছবি উঠালাম।
কুমিল্লা থেকে ফেনী রোডে নিয়মিত চলাচলকারী মদিনা বাসের চালক কোরবানি আলী বলেন, গ্রামে একসময় অনেক সোনালু গাছ দেখা যেত। আমাদের ঘরবাড়ির চারপাশেও ছিল অনেক গাছ। এখন খুঁজলে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি পাওয়া যাবে। হয়তো কাঠ খুব একটা দামি নয় বলে কিংবা গাছটি খুব ধীরে বাড়ে বলেই কেউ আর তেমন উৎসাহ নিয়ে সোনালু গাছ রোপণ করেন না।
কালিকাপুর ভূমি অফিসে কর্মরত পলাশ বলেন, ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে হলুদ রঙের বাহারি সোনালু। গাছ হলুদ ফুলে বর্ণিল থাকায় চলাচলের সময় মানুষ মুগ্ধ হচ্ছেন। যে কারণে চলাচলকারীরা এখন সোনালু ফুলের সুবাস নিতে নিতে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাঈমুর রহমান মাছুম বলেন, আমরা ছোটকালে এ সোনালু বাড়ির আশপাশেই দেখেছি। তবে এখন আর দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে এ গাছের দেখা মেলে। তবে এটি আমাদের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের একটি ঝলক। গ্রীষ্মকালে জারুল, কৃষ্ণচূড়ার মতো এ সোনালু ফুল প্রকৃতি আমাদের উপহারস্বরূপ দিয়েছে। তবে প্রকৃতিকে সাজাতে আমাদেরও সবার এগিয়ে আসা উচিত।
চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা রাবিনা ইসলাম বলেন, সোনালুর ইংরেজি নাম ‘গোল্ডেন শাওয়ার’ ও বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্যাসিয়া ফিস্টুলা’। মধ্যম আকৃতির সোনালু এ দেশের স্থায়ী বৃক্ষ। সোনালুর ফুলে পাপড়ি থাকে পাঁচটি। এটির পুংকেশর দশটি এবং দীর্ঘ মঞ্জুরি দণ্ড আছে। বসন্তে এটি পত্রশূন্য থাকে। গ্রীষ্মকালের বৈশাখে নতুন পাতা গজায়। প্রকৃতিতে শোভাবর্ধনে সোনালুর জুড়ি নেই। এর উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট হয়ে থাকে। সোনালু ওষধি বৃক্ষের তালিকাভুক্ত গাছ। সোনালু গাছের পাতায় ও বাকলে ওষধি গুণাগুণ আছে। বিশেষ করে, এর ফল বাত, বমি ও রক্তস্রাব প্রতিরোধে কাজ করে। এটি ডায়রিয়াও বহুমূত্র রোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, মহাসড়কের সৌন্দর্য বর্ধনে একপাশের আলো যেন অন্যপাশে এসে না পড়ে সেজন্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। এর ফলে দুর্ঘটনা এড়ানোও সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, হৈমন্তী, কুর্চি, টগর, রাধাচূড়া, কাঞ্চন, কদম, বকুল, পলাশ, কবরী, ক্যাসিয়া ও জারুলসহ প্রায় ৫৪ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এগুলোর উচ্চতা ২ মিটার থেকে ৫ মিটার। এছাড়া সড়ক স্লোপে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, চালতা, নিম, একাশিয়া, হরিতকীসহ ওষুধি ও ফলজ বিভিন্ন প্রজাতির ৪২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছ পরিচর্যায় জন্য শ্রমিক রয়েছে, তারা নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন। বর্তমানে সোনালু ফুল ফুটে মহাসড়কের পরিবেশ আরও দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।