Search

বাবরি মসজিদ ভেঙে নির্মাণের ছয় মাস না যেতেই রাম মন্দিরে ফাটল

ভারতে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির নির্মাণ শেষে উদ্বোধনের ছয় মাস না যেতেই ছাদ ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি ঝরছে। প্রথম বর্ষার বৃষ্টির পর থেকেই ‘বিপর্যয়’ শুরু রাম মন্দিরে। ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল। সেখান দিয়ে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়তে শুরু করেছে।


বাবরি মসজিদ ভেঙে নির্মাণের ছয় মাস না যেতেই রাম মন্দিরে ফাটল

সোমবার (২৪ জুন) রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে, সারাদেশের বিশিষ্ট প্রকৌশলীরা রাম মন্দির তৈরির কাজে সামিল হয়েছিলে। ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন হয়েছে মন্দিরের। কিন্তু, তারপরও এমন বিপর্যয় কেন?

এনডিটিভিকে পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস জানান, গত শনিবার মধ্যরাতে প্রথম ভারী বর্ষণ হয় অযোধ্যায়। তারপরই মন্দিরের গর্ভগৃহের ছাদে বড় ফাটল দেখা যায়। সেখান থেকে পূজারির বসার জায়গায় ঝরঝর করে পানি পড়তে শুরু করে। তাছাড়া, ভিআইপি দর্শনের জন্য যেখানে সবাই সমবেত হন সেখানেও বৃষ্টির পানি পড়ছিল।

মন্দির নির্মাণে গাফিলতির অভিযোগ করে আচার্য দাস বলেন, মন্দির চত্বর থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। উপযুক্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা না-থাকার কারণে এই বিপর্যয়, দাবি মন্দির কর্তৃপক্ষের। তবে মন্দির ট্রাস্ট সূত্রে খবর, ছাদ থেকে পানি চুঁইয়ে পড়ার ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে জানানোর পর মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র মন্দিরে পৌঁছে ছাদ মেরামত ও পানি রোধ করার নির্দেশ দেন।

মন্দির নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলার সময় মিশ্র বলেন, প্রথম তলার কাজ চলছে এবং এই বছরের জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হবে।

এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দিকেই আঙুল তুলেছে বিরোধীদল কংগ্রেস। তারা বিজেপি’র বিরুদ্ধে শহরে মন্দির নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ করে উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস প্রধান অজয় রায় সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, শহিদদের কফিন হোক বা ভগবানের মন্দির, এ সবই বিজেপি’র কাছে দুর্নীতির সুযোগ হয়ে উঠেছে।

 

 

 

তিনি আরও বলেন, দেশে বিশ্বাস ও পবিত্রতার প্রতীকও তাদের কাছে লুটের সুযোগ মাত্র। শুধু তাই নয়, অযোধ্যার উন্নয়নের ঢোল পিটিয়ে ৬২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামপথের অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। বিজেপি শুধুমাত্র নির্বাচনী সুবিধা পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে মন্দির নির্মাণ করে অযোধ্যাকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছে।

 

 

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি লোকসভা ভোটকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তড়িঘড়ি করে মন্দিরটি উদ্বোধন করেছিলেন। সে সময়ই অভিযোগ উঠেছিল, মন্দিরের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই লোকসভা ভোট ‘নজরে’ রেখে উদ্বোধন করা হচ্ছে। এর আগে ১৫২৮ সালে সম্রাট বাবরের নামের সঙ্গে মিলিয়ে সরযূ নদী পাড়ে নির্মাণ করা হয় তিন গম্বুজবিশিষ্ট এক মসজিদ। সাড়ে চার শতক পরে যা ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিতর্কের কেন্দ্র হয়ে উঠে। সেনাপতি মীর বাকি বাবরি মসজিদ নির্মাণের ৩৫৭ বছর পর ১৮৮৫ সালে মসজিদটি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক ও আইনি লড়াই। তিন গম্বুজওলা ওই মসজিদ শ্রীরামচন্দ্রের জন্মস্থান ভেঙেই তৈরি হয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন হিন্দুদের একটা বড় অংশ। তারা বলতেন, মসজিদের ভেতরে থাকা একটা উঁচু বেদীর মতো অংশেই রাম ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন।

শ্রীরামচন্দ্রের জন্মস্থান ভেঙেই তৈরি হয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন হিন্দুদের একটা বড় অংশ। তারা বলতেন, মসজিদের ভেতরে থাকা একটা উঁচু বেদীর মতো অংশেই রাম ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন।

এরপর ১৯৪৯ সালের ২২ডিসেম্বর রাতে বাবরি মসজিদে রাম ও সীতা মূর্তি রেখে আসে অজ্ঞাতনামা কোন হিন্দু উগ্রবাদী। এ ঘটনাকে অলৌকিক দাবি করে প্রার্থনা শুরু করে মন্দিরপন্থীরা। এ ঘটনার পর ১৯৫০ সালে মসজিদে তালা দেয় ভারতীয় আদালত। সাথে বন্ধ করে হিন্দুদের মূর্তি দর্শন। ১৯৫৯ সালে হিন্দুদের পক্ষে জমি চেয়ে মামলা করেন নির্মোহী আখড়া নামের এক ব্যক্তি। অপরদিকে ১৯৬১ সালে মসজিদের জমির মালিকানা দাবি করে মুসলমানদের পক্ষে আদালতের দারস্থ হন উত্তর প্রদেশ মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড। ১৯৮০-র দিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও তাদের রাজনৈতিক সহযোগী কট্টোর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা ওই স্থানে রাম মন্দির নির্মানে প্রচারাভিযান চালায়।

১৯৮৬ সালে আদালত মসজিদের তালা খোলার নির্দেশ দিলে ১৯৯০ সালে এ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে বেশ কিছু শোভাযাত্রা ও মিছিল বের করে লাল কৃষ্ণ আদভানি। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি দেড় লাখ কর সেবক নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করে। এ শোভাযাত্রা চলাকালীন সময়ে উগ্রবাদী হিন্দুরা সহিংস হয়ে ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এ মসজিদটি শহীদ করে। ৩ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে সংসদে পাশ হওয়া এক আইনের মাধ্যমে এ জমি দখল করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া ও রামলালা, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এই তিনভাগে জমিটি ভাগ করার রায় দেয় এলাহাবাদের তিন বিচারকের বেঞ্চ। কিন্তু ২০১১ সালের ৯ মে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় এবং ৯ নভেম্বর শনিবার ২০১৯ অযোধ্যার এ জমিটিতে হিন্দুদের মন্দির নির্মাণের রায় দেয় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট। একইসঙ্গে মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিমদের বিকল্প ৫ একর জমি দেওয়ার রায় দেওয়া হয়। তবে রাম মন্দির উদ্বোধনের কাজ শুরু হলেও সেই মসজিদ নির্মাণের কাজে কোনো অগ্রগতি নেই।