Search

ঠাকুরগাঁওয়ে সবজি চাষে বিপ্লব, বছরে হাজার কোটি টাকার বিক্রি

নানা জাত ও স্বাদের সবজি চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া, রাজাগাঁও, নারগুন, বেগুনবাড়িসহ কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামে। বছরে ১ হাজার থেকে এগারো শ কোটি টাকার সবজির উৎপাদন হয় এ গ্রামগুলোতে।


ঠাকুরগাঁওয়ে সবজি চাষে বিপ্লব, বছরে হাজার কোটি টাকার বিক্রি
  1.  

গ্রামগুলোতে বেশিরভাগ পরিবার এখন সবজি চাষের সঙ্গে যুক্ত। এতে হতদরিদ্র গ্রামবাসীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। অনেক যুবকের বেকারত্ব ঘুচেছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে গ্রামগুলোর সবজি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

গড়েয়া ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, এই ইউনিয়নের মধ্যে বাগেরহাট, চন্ডীপুর, নীলারহাট, গুঞ্জরগড় ও চকহলদি গ্রামে বছরে চাষ হচ্ছে দেড় হাজার মেট্রিক টন সবজি।

তিনি বলেন, গ্রামগুলোর উৎপাদিত শাকসবজি জেলার চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট-বাজারে। এখান থেকে বছরে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সবজি। 

গ্রামগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ সময়ে মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, বেগুন, ঢেড়স, বাঁধাকপি, করলা, পটোলসহ বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। গ্রামগুলোতে সকাল হলে ছুটে যান ব্যবসায়ীরা।

চকহলদি গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন জানান, কয়েক বছর আগেও তিন বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করতেন। তবে এখন রবি মৌসুমে পুরো জমিতেই সবজি আবাদই করছেন।

সিরাজ আলী বলেন, ধান চাষের চেয়ে সবজি চাষ তুলনামূলক লাভজনক। এক বছরে মৌসুমভিত্তিক নানা সবজি চাষ করা যায়। এতে প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ করতে পারছি।

পাশের রাজাগাঁও গ্রামের প্রান্তিক কৃষক সাদেকুল আলম এক সময় শুধু বোরো, আমন ধান চাষাবাদ করতেন। কয়েক বছর ধরে অন্য ফসলের চাষাবাদ কমিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। কয়েকদিন আগে ফাড়াবাড়ি আড়তে কুমড়া ও বাঁধাকপি বিক্রি করতে আসেন সাদেকুল। এ সময় তিনি বলেন, এবার সবজির ফলন ভালো হয়েছে। তবে শুরুতে কিছুটা বাড়তি দাম পেলেও এখন বাজার দর পড়ে গেছে।

একই এলাকার সবজি চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে আমার আয় হয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। এতে আমাদের ধানের চেয়ে সবজিতে বেশি লাভ হচ্ছে। তাই সবাই সবজি বা অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছে।

পাশের বাগেরহাট আড়তের স্থানীয় ব্যাপারী কাদের মিয়া বলেন, প্রতিদিন এই ইউনিয়নের বাগেরহাট, চন্ডীপুর মোড় ও গড়েয়া আড়তে পাইকারি সবজি বেচাকেনা হয়। বিকেলের পর থেকে ট্রাকে সবজি লোড করা হচ্ছে। রাতে এসব সবজি ট্রাকে করে রাজধানীর কাওরানবাজার আড়তে পৌঁছে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় মোট ৩ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলমগীর কবীর বলেন, সদর উপজেলার মধ্যে গড়েয়া, নারগুন ইউনিয়ন কৃষিতে সমৃদ্ধ এলাকা। কয়েক বছর ধরে সবজির ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা। এখান থেকে বছরে প্রায় ১০০০ থেকে ১১০০ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। ভবিষ্যতে সবজির গ্রামগুলোকে রোল মডেল করে আদর্শ কৃষি গ্রাম করার পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি বিভাগের।