Search

জেঁকে বসেছে পৌষের শীত, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন

কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ কষ্টে দিন পার করছেন। কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা।


জেঁকে বসেছে পৌষের শীত, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, দেশের উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পৌষের মাঝামাঝিতে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে নাকাল অবস্থা জনজীবনে। সব থেকে চরম বিপদে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা গ্রামের কৃষক শৈলান চন্দ্র রায় ও গজেরকুটি গ্রামের কৃষক সুবল চন্দ্র রায় জানান, প্রচণ্ড শীতের কারণে তারা বোরো বীজতলা ও আলুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, রৌমারীতে শীতজনিত কারণে হঠাৎ করেই বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। গত এক সপ্তাহে অর্ধশতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, শীতজনিত কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ।

রংপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, রংপুরে পৌষ মাসের ক্রান্তিলগ্নে শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। গত দুদিন থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে অনেকটাই বিপর্যস্ত এখানকার জনজীবন। সূর্যের লুকোচুরিতে শীত নিবারণে পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা পড়ছেন বিপাকে। আয়-রোজগারে শীতের প্রভাব পড়ায় কষ্টে আছেন দিনমজুর, শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি গ্রামের কৃষক আমজাদ আলী (৫৯) বলেন, ঠান্ডা বাতাস ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে বেগুন ও কাঁচামরিচ খেতের পরিচর্য়া করতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাওয়া ৫০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো কম্বল বরাদ্দর জন্য আবেদন করা হয়েছে।

রাণীনগর (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, দ্বিতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবারও নওগাঁয় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার যে তাপমাত্রা ছিল ১০.২ ডিগ্রি। গতকালের চেয়ে বৃহস্পতিবার কিছুটা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু শীতের তীব্রতা কমাতে তাপমাত্রার এই সামান্য বৃদ্ধি কোনো প্রভাবই ফেলছে না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।

 

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়ছেন চা-শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের পরিবার সদস্যরা। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। জনজীবনে দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। চা-শ্রমিকরা জানান, স্বল্প আয় থাকায় গরম কাপড় কেনা তাদের অধিকাংশেরই সামর্থ্যের বাইরে। শীত নিবারণে এসব পরিবার সদস্যরা ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে গরমের ভাপ লাগান। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, শীতের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, শীতের হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু বিভাগে রয়েছে উপচেপড়া ভিড়। তীব্র শীতের দাপটে শ্বাসকষ্টজনিত রোগসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত দুই দিনে আট জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডা বিরাজ করছে, রাতে পড়ছে ঘন কুয়াশা। ঠান্ডার কবলে পড়ে সর্বস্তরের মানুষ বেকায়দায় পড়ছে। বেশি কষ্টে রয়েছে বয়স্ক ও শিশুরা। তারা ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর অবস্থা আরো নাজুক। প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে তারা ঠান্ডায় পারছে না কাজ করতে। গ্রামের লোকজন দিনের বেলায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো জেঁকে বসা পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত আগৈলঝাড়া উপজেলার জনজীবন। হিমেল বাতাসের সঙ্গে চলছে কুয়াশার দাপট। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে কস্ট করে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া লোকজন।

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, তীব্র শীতের প্রকোপে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ভাইরাস ও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন আক্রান্তরা। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ১০-১৫ জন রোগী। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমিমুল ইহসান তৌহিদ বলেন, শীতে প্রতি বছর শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বাড়ে। এবারও বেড়েছে। তবে এবার শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, চলমান শীতের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে আকাশ। ঘন কুয়াশার কারণে এরই মধ্যে বোরো ধানের বীজতলার চারাগুলো গাঢ় সবুজ থেকে ক্রমেই কুঁকড়ে হলুদাভ হয়ে পড়ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, আঠার ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা প্রবাহিত হলে বীজতলা ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ১০.৫ থেকে ১২.৮ ডিগ্রিতে ওঠা-নামা করছে।