Search

চাঁদের আলোয় ধান কাটেছেন কৃষকরা

শরীয়তপুরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। তীব্র তাপপ্রবাহ ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে জনজীবনে বেড়েছে ভোগান্তি। হিটস্ট্রোকে প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও কেউ মারা যাচ্ছেন। আর এই শঙ্কায় রাতে ধান কাটছেন জেলার কৃষকরা।


চাঁদের আলোয় ধান কাটেছেন কৃষকরা

জানা যায়, দাবদাহের ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন শরীয়তপুরের বোরো ধান চাষীরা। অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা ধান কাটতে পারছেন না তারা। তাই বাধ্য হয়ে রাতে ধান কাটছেন অনেক কৃষক।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শরীয়তপুরে কৃষি শ্রমিকের সংকট চরমে পৌঁছেছে। গত কয়েক দিন ধরে আগাম জাতের ধান পাক ধরায় কৃষকরা কাটা শুরু করেছেন। গরমের কারণে শ্রমিকের অভাবে তারা ধান তুলতে পারছেন না।

ধানচাষীরা জানান, সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। এর প্রভাব পড়েছে শরীয়তপুরেও। এরমধ্যে আবার জেলার অধিকাংশ জমিতে বোরোধান পাকতে শুরু করেছে। তবে অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন অসুস্থতার ভয়ে ধান কাটতে পারছেন না চাষিরা। তাই রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ধান কাটতে দেখা গেছে তাদের। এই অতিরিক্ত গরমে শ্রমিক না পেয়ে নিজেরাই নিজেদের জমির ধান কাটছেন। যতদিন চাঁদের আলো থাকবে, ততদিন এই ধান কাটবেন বলছেন তারা।

 

 

সদর উপজেলার ভাষান চর এলাকার চাষী রহমতুল্লাহ বলেন, ভোরে মাঠে গিয়ে ধানের জমিতে কাজ শুরু করতেই সূর্য উঠছে। সূর্যের তাপে গরমে শরীর ঘেমে যাচ্ছে। বেশি সময় মাঠে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত তাপের কারণে ধান গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। জমিতে পানি জমিয়ে রাখলেও শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই ৪ জন কৃষাণ নিয়ে রাতে ধান কাটি। রাত ৯টা থেকে শুরু করে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে এ ধান কাটা।

 

 

আংগারিয়া এলাকার ধানচাষী মিজান মাদবর বলেন, আমি রাতের বেলায় কৃষাণ নিয়ে ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটার কাজ শুরু করেছি। মূলত দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে অনেকেই ধান কেটে দিতে রাজি হয়নি। পরে রাতের বেলা ধান কাটা শুরু করি। রাতের বেলা জমিতে যেমন বাতাস থাকে তেমনি ঠান্ডাও থাকে। আমি মনে করি এই সময়ে রাতেই ধান কাটার উপযুক্ত সময়।

 

 

শরীয়তপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় ২৫ হাজার ৫২৬

হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫৮৫ হেক্টর, নড়িয়া উপজেলায় ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর, জাজিরা উপজেলায় ১ হাজার ১৫১ হেক্টর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ডামুড্যা উপজেলায় ৩ হাজার ৮২১ হেক্টর ও গোসাইরহাট উপজেলায় ৪ হাজার ৮৯৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

 

 

গত বছর জেলায় আবাদ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৬ টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেড়েছে ৩৩৬ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে জেলায় বোরোধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৭ টন। তবে একটানা চলা প্রচণ্ড দাবদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যঘাত ঘটবে বলে ধারণা করছে কৃষিবিভাগ।

 

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে আমাদের কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। তাই যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।