ক্লিনিকের বিল দিতে সন্তান দত্তক, ১৫ দিন পর মায়ের কোলে
গাজীপুরের শ্রীপুরে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে না পেরে দত্তক রাখা শিশুকে ফিরে পেয়েছেন মা। ১৫ দিন পর আজ শনিবার স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে শিশুটিকে ফিরে পান প্রসূতি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে পারছিলেন না শিরিন আক্তার (২০) নামের এক নারী। পরে নবজাতক শিশুকে দত্তক দিয়ে টাকা নিয়ে ওই টাকায় বিল পরিশোধ করে শূন্য কোলে বাড়ি ফেরেন তিনি। এর পর থেকে সবার কাছে সন্তানকে ফেরত পেতে আকুতি জানিয়ে আসছিলেন শিরিন।
বিষয়টি জানতে পারেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাদশা। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
শিরিন আক্তার ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার মনিকুরা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে।
মা-বাবার সঙ্গে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে ভাড়া থাকেন তিনি। তার স্বামী আরিফুল ইসলাম পরিবহনে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। পাঁচ মাস ধরে শিরিন আলাদা থাকছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
শিরিন আক্তারের বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, ১৬ অক্টোবর তার মেয়ের প্রসব ব্যথা উঠলে ময়মনসিংহের চরপাড়ায় বেসরকারি একটি ক্লিনিকে ভর্তি করেন।
সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক ছেলেশিশুর জন্ম হয়। অস্ত্রোপচারের তিন দিন পর ছাড়পত্র দেওয়ার সময় ক্লিনিকে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা বিল পরিশোধ করতে বলা হয়। ওই সময় তার কাছে টাকা ছিল মাত্র ১৩ হাজার। এতে এক নারী নবজাতক শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে বিল পরিশোধের চাপ দেওয়ায় নিরুপায় হয়ে শিশুটিকে তারা এক দম্পতির হাতে তুলে দেন।
বিনিময়ে যে টাকা পান তা দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন।
বিষয়টি জানতে পেরে আকরাম হোসেন বাদশা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হাজি ইসমাইল হোসেনের মাধ্যমে খোঁজ নেন। ইউপি সদস্য বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ওই দম্পতির টাকা পরিশোধ করে শিশুটিকে ফিরিয়ে আনা হয়। আজ শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম এবং আকরাম হোসেন বাদশা উপস্থিত ছিলেন।’
সন্তান ফিরে পেয়ে শিরিন আক্তার বলেন, ‘১০টা মাস পেটে রাইখ্যা জন্ম দিছি যে বুকের ধনটারে, হেরেই হারাইয়া ফালছিলাম। বুকের ধন ছাড়া খালি মনে অইতো, আমি মইরা যায়াম। আজকা ফিরা পাইছি, যেন নতুন জীবন পাইছি।’
আকরাম হোসেন বাদশা বলেন, ‘ঘটনাটি জেনে মর্মাহত হই। শিশুটিকে দত্তক দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে হয়েছে একজন প্রসূতিকে―এটা ভাবা যায়! আমার দায়িত্ববোধ থেকেই মায়ের কোলে সন্তান ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটি করেছি।’