Search

কাজ না করে প্রকল্পের টাকা পকেটে নিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ফরদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ড্রেন নির্মাণ না করেই প্রকল্পের জন্য বরাদ্ধকৃত পুরো টাকা উত্তোলন করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফরদাবাদ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পূর্বহাটি গ্রামে এই ড্রেন নির্মাণের কথা রয়েছে।


কাজ না করে প্রকল্পের টাকা পকেটে নিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা উন্নয়ন তহবিল থেকে এ ড্রেন নির্মাণের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছিল। গত জুন মাসে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে বরাদ্ধের পুরো টাকাই তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পূর্বহাটি গ্রামে পানি নিষ্কাশনের জন্য ২৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ড্রেন নির্মাণের জন্য উপজেলা উন্নয়ন তহবিল থেকে ২ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। সরকারি নীতিমালা লংঘন করে কাজটি বাস্তবায়নের ইউপি চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলাম ও তার ভাইয়ের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাকসেস টেকনোলজি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু কাজ না করেই গত জুন মাসে ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই প্রকল্পের পুরো বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার হালিমা বেগম বলেন, ‘টাকা জুন মাসে উঠানো হয়েছে এটা সত্য। আমি ও আমার বোন অসুস্থ ছিলাম তাই কাজ করতে দেরি হইছে। কাজটা দেরি হওয়ার কারণে মানুষে বলাবলি করতেছে আমি ও চেয়ারম্যান নাকি কাজ না কইরা টাকা মাইরা দিয়েছি, আসলে ব্যাপারটা ঠিক না। টাকা উঠিয়ে মালামাল ক্রয় করে প্রকল্প থেকে একটু দূরে রাখা হয়েছে।’

 

 

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন এই প্রকল্প তদারকির জন্য একজন উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ করেন। তিনি কাজ বাস্তবায়ন না করেই জুন মাসের শেষ সপ্তাহে কাজ সম্পন্ন হয়েছে এ মর্মে একটি ভুয়া প্রত্যায়নপত্র দেন।

 

 

বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠলে তড়িগড়ি করে গত সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র প্রায় ৫০ ফুটের মতো ড্রেন নির্মাণ করে ইউপি চেয়ারম্যান। এর পর থেকে কোনো কাজ হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্বহাটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ড্রেন নির্মাণের জন্য ১০০ ফুটের মতো জায়গায় মাটি কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ ফুটের মতো জায়গায় ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে গত মাসে। বাকি ১৫০ ফুট জায়গায় মাটি কাটা বা ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। ড্রেন নির্মাণকাজ চলার কারণে মাটি কাটার ফলে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। ড্রেন নির্মাণের জন্য ওই এলাকায় কোনো ইট, সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রী দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে পূর্বহাটি গ্রামের কবির হোসেন বলেন, ‘রাশেদ চেয়ারম্যান আমাকে ড্রেন তৈরির জন্য দেড় হাজার ইট, ২ গাড়ি বালি ও নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এই টাকা ও মালামাল দিয়ে যেটুকু সম্ভব ততটুকুই ড্রেন নির্মাণ করেছি। ওনি মালামাল না দিলে আমি পুরো ড্রেন কীভাবে করব।’

এ বিষয়ে ফরদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পাপিয়া আক্তার জানান, ‘পূর্বহাটিতে ড্রেনের কাজটি বিল গত জুনের ৩০ তারিখে তোলা হয়েছে। কিছু কাজ করা হয়েছে, বাকিটাও করা হবে। চেয়ারম্যান সব জানে।’

ফরদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলাম জানান, ‘কিছু কাজ করা হয়েছে। বাকি কাজ দুই একদিনের মধ্যে ধরা হবে। জুনে টাকা না ওঠানো হলে টাকা ফেরত যাবে তাই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিক আমি না। আমার বড় ভাই জাপান প্রবাসী কামরুল ইসলাম শিপু এ প্রতিষ্ঠানের মালিক।’

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী ফেরদৌস জানান, ‘জুন মাসে অনেক বিল ছাড় করতে হয়েছে সেসময় হয়ত এ বিলটিও ছাড় করা হয়েছে। যদি কাজ না করা হয়ে থাকলে আমি ঘটনাস্থলে যাব।’

এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পূর্বহাটি গ্রামে ড্রেনের কাজ না করে বিল তুলে নিয়েছে বলে শুনেছি।’

এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একি মিত্র চাকমা বলেন, ‘পূর্বহাটি গ্রামে ড্রেনের আংশিক কাজ করে পুরো বিল তুলে নিয়েছে বলে শুনলাম। এখন খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’#