এর আগে ফসল সব বানে খেয়ে গেছে, এহন খরায় পুড়ে যাচ্ছে
গাইবান্ধায় আমন চাষাবাদের ৩ শতাধিক কৃষকের অনন্ত ৩০০ বিঘা খেত বন্যার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো জমির চারাগাছ দু-একটি বেঁচে থাকলেও তা এখন পুড়ে যাচ্ছে প্রখর রোদে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের রেজিয়া বাজার ও মাস্টারের বিল এলাকায় বর্তমানে এমন অবস্থা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গিদারী ইউনিয়নের রেজিয়া বাজার ও মাস্টারের বিল এলাকায় একটি জমিতে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে অন্য জমি থেকে পানি এনে আমনখেত বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন গৃহিনী লাকী খাতুন। পাশেই আবার কোনো জমিতে নতুন করে দ্বিতীয় দফায় চারা রোপণ করা হচ্ছে। খেত পুরোপুরি নষ্ট হওয়া কিছু জমি আবার অনাবাদীই পড়ে আছে। এমন চিত্র পুরো বিল জুড়েই।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, রোপণের ১৫ দিনের মধ্যেই পানিতে ডুবে এসব খেত নষ্ট হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর স্বচ্ছল কৃষকরা আবারও নতুন করে হাল দিয়ে চারা কিনে ওই পানিতেই রোপণ করলেও বেশিরভাগ জমি এখন পানি শূন্যতায় রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। তবে এখনও কিছু খেতে জলাবদ্ধতা রয়েছে।
তাদের অভিযোগ, এই এলাকার প্রায় ৩০০ বিঘা জমির খেত নষ্ট হলো। অথচ কৃষি বিভাগের কেউই একদিনও খোঁজ নেয়নি। পরামর্শ কিংবা সহযোগিতার কথাও জানাইনি। তাদের দাবি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ধার-দেনা করে কৃষকরা আবাদ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঠিক তালিকা করে কৃষি প্রণোদনাসহ আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন।
জমিতে পানি ছিটিয়ে সেচ দেওয়ার সময় লাকি বেগম বলেন, আমরা কৃষি কাজ করে খাই। কত কষ্ট করে ৬ বিঘা বর্গা জমিতে আবাদ করছিলাম। রোপণের এক সপ্তাহের মধ্যেই সব বানে খেয়ে গেছে। পড়ে আবার লাগালাম এহন খরায় পুড়ে যাচ্ছে।
রেজিয়া বাজার এলাকার বর্গাচাষী আব্বাস মিয়া বলেন, ১৬ হাজার টাকা ধার-দেনা করে দুই বিঘা জমিতে আমন ধান গারছিলাম (রোপন) । বানের পানিতে ডুবে সব নষ্ট হয়ে গেছে। দুই একটা কুঁশি বের হচে (হয়েছে), কিন্তু তার ভরসা নাই। কামলা দিয়ে খাই। আবার হাল দেওয়া, বেছন(চারা) কেনা সম্ভব নয়। এখন পানিও নাই, হামার জমি পড়ে থাকবে।
গৃহস্থ আবুল হোসেন বলেন, এই এলাকার ২০০-৩০০ বিঘা জমির ক্ষেত বানের পানিতে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, এতগুলো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আজও কৃষি অফিসের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। কোনো ধরনের পরামর্শ বা সহযোগিতাও করেনি। অন্তত সরকারিভাবে যদি চারা-সার দিত, তাহলে এসব জমি পড়ে থাকতো না। আবুল হোসেনেরও তিন বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি আমন মওসুমে জেলার সাত উপজেলায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এ মওসুমের আমন রোপনের শেষ দিনে জেলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৪ হেক্টর রোপনকৃত জমির পরিমাণ দেখিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এর মধ্যে ২৬ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টি এবং উজানের ঢলের সৃষ্ট বন্যায় ছয় উপজেলায় ৩ হাজার ৬৭৯ জন কৃষকের, ২ হাজার ৩৭০ বিঘা (৩১৬ হেক্টর) জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব বিষয়ে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, গেল মওসুমে খরার কারণে আউশের (বর্ষালীর) আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিবছরেই সরকারিভাবে সার-বীজ দেওয়া হয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে তাদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।