আইনজীবী ছেলের মামলায় কারাগারে বৃদ্ধ বাবা
আইনজীবী ছেলের দায়ের করা মামলায় কারাগারে গেলেন বৃদ্ধ বাবাসহ তিনজন। কক্সবাজারের রামুতে প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানদের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রথম স্ত্রীর ঘরের সন্তান আইনজীবী আয়াত উল্লাহ হোমিনীর দায়ের করা মামলায় কারান্তরীণ হন বাবা মোহাম্মদ হাছান (৭০)।

বৃদ্ধ হাছান রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উখিয়ারঘোনা লামারপাড়া গ্রামের মৃত হাকিম আলীর ছেলে। বিষয়টি প্রকাশ পাবার পর রামুসহ জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এ নিয়ে নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ছেলে অ্যাডভোকেট আয়াত উল্লাহ হোমিনির দায়ের করা মামলায় বুধবার কক্সবাজারের অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদের আদালতে জামিন আবেদন করেন পিতা মো. হাছানসহ ৩ জন। বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলায় হাছান ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন, হাছানের চাচি শাশুড়ি রাশেদা বেগম এবং রাশেদা বেগমের ছেলে নুরুল আবছার।
হাছানের দ্বিতীয় স্ত্রী রেহেনা বেগম জানান, তার নাবালক ৫ সন্তানের ভবিষ্যতের সুরক্ষায় তার স্বামী সন্তানদের নামে কিছু জমি হেবা করেন। একইভাবে পুরোনো বাড়ি-ভিটেসহ আরও কিছু জমি হেবা দেন প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের নামে। এ ঘটনার পর প্রথম স্ত্রী ও তাদের সন্তানরা আমাকে (২য় স্ত্রীকে) ৫ নাবালক সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের করে দেন। থাকার জায়গা না পেয়ে আমার (২য় স্ত্রী) সন্তানদের নামে হেবাকৃত জমিতে বসতঘর তৈরির কাজ শুরু করা হয়। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ঘর তৈরিকালে আমাদের ওপর হামলা চালান প্রথম স্ত্রীর সন্তান অ্যাডভোকেট আয়াত উল্লাহ হোমিনি ও তার ভাই ওমর ফারুক, তৈয়ব উল্লাহ, হাবিব উল্লাহসহ অন্যান্য সহযোগীরা। হামলায় আমি (২য় স্ত্রী রেহেনা), ছেলে আনাছ, মেয়ে কানিজ ফাতেমা ও ভাই মো. জসিম উদ্দিন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় আমার স্বামী বাদী হয়ে আয়াত উল্লাহ হোমিনিসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় আদালতে পাল্টা মামলা করেন আয়াত উল্লাহ। এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনের পর জামিন নিতে গেলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
রেহেনার অভিযোগ তাদের সবাইকে নির্মমভাবে কুপিয়ে আহত করলেও আয়াত উল্লাহ ও তার সহযোগীদের জেলে যেতে হয়নি। অথচ মিথ্যা মামলায় ৭০ বছরের বৃদ্ধ স্বামী, তার কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলেমেয়ে ও ভাইসহ ৮ জনকে জেলে যেতে হয়েছে।
জানতে চাইলে মামলার বাদী আয়াত উল্লাহ হোমিনি জানান, আমি ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। পরে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা নতুন করে ৩ জনকে যুক্ত আদালতে অভিযোগপত্র (সিএস) দায়ের করেন। আসামিরা জামিন নিতে এলে পিতাসহ ৩ জনকে জেলে পাঠিয়েছে।
তিনি আরও জানান, মামলার এজাহারে তিনি বাবার নাম দেননি। কিন্তু পরবর্তীতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত ও স্বাক্ষ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে তার বাবাকে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত করেন।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, পিতাপুত্রের পাল্টাপাল্টি মামলা সামাজিক অবক্ষয় ছাড়া আর কিছুই নয়। যে বাবা ছেলেটিকে পৃথিবীতে এনেছেন, শিক্ষিত করিয়ে আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গঠনে পেছনে ভূমিকা রেখেছেন, সেই ছেলের মামলায় বাবাকে কারান্তরীণ হতে হওয়ার ঘটনা চরম দুঃখের এবং লজ্জার।#