Search

আইতোত ঠান্ডাতে ঘুমে ধরে না, খুব কষ্ট মোর

‘আইতোত দুখনা (রাতে দুইটা) খেতা গাত দিয়া থাকোং (কাঁথা গায়ে দিয়ে থাকি), ঠান্ডাতে ত্যাই ঘুমে ধরে না। একজনে একটা চাদর দিছে তাহে (সেটা) দিনোত (দিনে) গাত (গায়ে) দিয়া থাকোং (থাকি)। খাবারও মোর (আমার) জোটে না তিন বেলা। খুব কষ্ট মোর (আমার)।’


আইতোত ঠান্ডাতে ঘুমে ধরে না, খুব কষ্ট মোর
  1.  

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের সরদারপাড়া এলাকার ভূমিহীন মৃত জহুর উদ্দির স্ত্রী বৃদ্ধা অজিরন বেওয়া (৭০)।

তিনি আরও বলেন, ‘এই ঠান্ডাত খুব কষ্টোত আছোং (আছি)। কাউও (কেউ) খবরও নিবার (নিতে) আইসে নাই। শুনছোং (শুনেছি) মেলা মানষে (মানুষ) নাকি কম্বল পাইছে। মোকে (আমাকে) একটা কাউও (কেউ) কম্বল দিলে না। এর বাড়ি, ওর বাড়ির খাবার খ্যায়া (খেয়ে) বাঁচি আছোং (আছি)।

অজিরন বেওয়া বলেন, ‘মোর (আমার) একটা বেটা, দুইটা বেটি (মেয়ে)। একটা বেটি মারা গেইছে। বেটাটা (ছেলেটা) বিয়াও করি বউ বাচ্চাক নিয়া তার শ্বশুরবাড়িত থাকে। মাঝে মাঝে খবর নিবার (নিতে) আইসে। তারে সংসার চলে না, মোক (আমাকে) দেয় কোনডাই (কই) থাকি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অজিরন বেওয়ার স্বামী ভূমিহীন মৃত জহুরউদ্দি ৩০-৩৫ বছর আগে মারা গেছেন। পরে ওই ইউনিয়নের সরদারপাড়া এলাকায় সরকারি রাস্তায় কোনো রকমভাবে থাকার জন্য একটি ছায়লা ঘর তুলে দেন স্থানীয় লোকজন। সেখানেই দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করছেন তিনি। 

এদিকে তার ছেলে ছামাদ আলী বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন অনেক দিন যাবৎ। তবে মাঝে মধ্যেই মায়ের খবর নিতে আসেন তিনি। অপর দিকে অজিরন বেওয়া বয়স্ক ভাতার টাকা পেলেও, তা তার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এই বয়সে এসে সন্তানরা দায়িত্ব না নেওয়ায় বর্তমানে তীব্র ঠান্ডায় খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছেন অজিরন বেওয়া।

স্থানীয়রা বলছেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কেউ যদি এই বৃদ্ধাকে সাহায্য ও সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিতেন তাহলে হয় তো তার বাকি জীবনটা একটু সুখে-শান্তিতে কাটাতে পারতেন।

প্রতিবেশী মর্জিনা বেগম বলেন, অজিরন বেওয়ার কেউ নেই। বিভিন্ন বাড়ি থাকি খাবার সংগ্রহ করে তা খেয়েই বেঁচে আছেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে তারাও খবর নেয় না তার। তারাই বাঁচে না, কামলা দিয়া খায়। হঠাৎ একদিন এসে মাকে দেখে যায়, আর পরবর্তীতে খবর থাকে না তাদের।

স্থানীয় ফজিলা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘অজিরন বেওয়ার ছেলে থাকে শ্বশুরবাড়িত। সেখানে তার বউ বাচ্চা নিয়া আছে। তার মা একাই এখানে থাকে। কত ঠান্ডা যাবাইছে খুব কষ্ট করি দুইটা মাত্র খেতা গাত (কাঁথা গায়ে) দিয়া থাকে। ঠিকমতো খাবারও পায় না, যখন মানুষ খাবার দেয়, তখন সেন খায়। আমরা তো সব সময় দেখপার নাগছি, এই বয়সে এসে তার কষ্টের শ্যাষ নাই।’

এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, ওই বৃদ্ধা মায়ের শীতের কাপড় ও খাবার সংকটের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাকে নাম ঠিকানা দেন এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। 

এদিকে গত ৮-৯ দিন ধরে কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা নিম্নগামী থাকায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন জেলার খেটে খাওয়া ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষজন। আজ শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, আরও ২-৩ দিন তাপমাত্রা নিম্নগামী থাকতে পারে। পরে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।