Search

'ইসরাইলে চলতি বছরটি ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তাক্ত'

ইহুদিবাদী ইসরাইলের চ্যানেল টুয়েলভ টেলিভিশন বিগত আট মাসকে ইসরাইলের জন্য বিগত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তাক্ত বছর বলে মন্তব্য করেছে।


'ইসরাইলে চলতি বছরটি ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তাক্ত'

চলতি বছরের এখনও চার মাস বাকি অথচ গত আট মাসে অন্তত ৩৬ জন দখলদার ইসরাইলি ইহুদিবাদী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় ইহলীলা সাঙ্গ করেছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে চার জনেরও বেশি ইসরাইলি ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের হামলায় খতম হয়েছে। 

এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার এক জরুরি সভায় মিলিত হয়েছে সন্ত্রাসী ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভা। এ বৈঠকে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে 'ইসরাইলি প্রতিরক্ষা দেয়াল-দুই' শীর্ষক সেনা-অভিযান শুরুর প্রস্তাব করা হলেও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ব্যাপক পাল্টা অভিযানের আশঙ্কায় তা শুরু করতে রাজি হয়নি নেতানিয়াহু ও তার যুদ্ধমন্ত্রী। ফিলিস্তিনিদের  দ্বিতীয় ইন্তিফাদা আন্দোলনের সময় তথা ২০০২ সালে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দমনের জন্য 'ইসরাইলি প্রতিরক্ষা দেয়াল' শীর্ষক সেনা অভিযান চালিয়েছিল ইসরাইল।

সাম্প্রতিক সময়ে সর্বাধুনিক অস্ত্র-সজ্জিত ইসরাইলি বাহিনী কেনো অধিকৃত পশ্চিম তীরে এমন প্রবল প্রতিরোধের মোকাবেলা করছে এবং এই প্রতিরোধ দমনে ব্যর্থ হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাব হল প্রথমত: ফিলিস্তিনি তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে এখন এই চেতনা ছড়িয়ে পড়েছে যে মুক্তির একমাত্র পথ হল সশস্ত্র সংগ্রাম। আলোচনার নামে আপোসকামী ফিলিস্তিনি নেতারা আসলে ইসরাইলি দখলদারিত্বকেই পাকাপোক্ত করার সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং আপোসের নামে এক শ্রেণীর ফিলিস্তিনি স্বজাতির বিরুদ্ধেই ইসরাইলি সেনাদের দোসর হয়ে কাজ করছে। ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের গ্রেফতার ও নিরীহ ফিলিস্তিনিদেরও বিনা বিচারে বন্দি রাখার কাজগুলো করা হচ্ছে আপোস করার কারণেই। তাই এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা বুঝতে পেরেছে যে সশস্ত্র সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই।

দ্বিতীয় যে কারণে ইসরাইল ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে তা হল তাদের গেরিলা হামলার কৌশল। আঘাত হেনে দ্রুত সরে পড়ার বা গেরিলা পদ্ধতির যুদ্ধ হচ্ছে এমন এক পদ্ধতি যার মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সর্বাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীকেও বিপর্যস্ত করা সম্ভব।

তৃতীয় যে কারণে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরাইলকে নাকানি চুবানি খাইয়ে দিতে সফল হচ্ছে তা হল পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা এখন সহজেই অস্ত্র-সজ্জিত হতে পারছে যে সুযোগ তাদের আগে ছিল না। ইরান ও হিজবুল্লাহসহ ফিলিস্তিনিদের কোনো কোনো সহযোগী শক্তির সহায়তার সুবাদেই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও সশস্ত্র গেরিলা আন্দোলন দিনকে দিন জোরদার করতে সক্ষম হচ্ছে  ফিলিস্তিনের সংগ্রামী মুক্তি বাহিনী। সম্প্রতি আল খলিল শহরে দুই ফিলিস্তিনি সংগ্রামী কয়েকজন ইসরাইলিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করলেও হামলাকারী ওই দুই ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীকে  এখনও খুঁজে বের করতে পারেনি ইসরাইলি দখলদার সেনারা।

সাম্প্রতিক সময়ে অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে ইহুদিবাদীদের বিপরীত অভিবাসন  তথা ইউরোপে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা বেশ জোরদার হয়েছে ফিলিস্তিনি গেরিলা যুদ্ধ জোরদার হওয়ার কারণেই। ইউরোপীয় দূতাবাসগুলোতে ইসরাইলি অভিবাসীদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে।

সম্প্রতি, লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ  বলেছেন, ইসরাইলি দখলদারিত্বের দুর্বল অভ্যন্তরীণ ফ্রন্ট একটি ‘আদর্শগত পশ্চাদপসরণের’ মুখোমুখি হয়েছে, যা বসতি স্থাপনকারীদেরকে তাদের তল্পিতল্পা গুটাতে এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূমি ছেড়ে চলে যেতে চালিত করছে।

ইসরাইলের ১৩ নম্বর টিভি চ্যানেল গতমাসে এক জরিপে দেখতে পেয়েছে, ২৮ শতাংশ ইসরাইলি এই অবৈধ রাষ্ট্র ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। জরিপে অংশ নেয়া ৫৪ শতাংশ মানুষ বলেছে, বিচার বিভাগীয় সংস্কার আইন ইসরাইলের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করেছে এবং ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইসরাইলে একটি গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করছে। #