ঢাকা আজ সমাবেশের শহর
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ শনিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের এ সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। এতে সমাবেশের স্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটল। এদিকে, বিএনপি যাতে আজ কোনোভাবেই রাজপথের দখল নিতে না পারে এ জন্য বড় ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

তারা বলেছে, শান্তিপূর্ণ কোনো সমাবেশে বাধা দেবে না। তবে যেকোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে প্রস্তুত দলের নেতাকর্মীরা। রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে দলের নেতাকর্মীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অনুমতি পেয়ে বিএনপি আজ দুপুর ২টায় মহাসমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
এদিন নয়াপল্টনের কর্মসূচি ঘিরে আশপাশের এলাকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিএনপির সমমনা ১২ দল ও জোট পৃথক সমাবেশ করবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ধারণা করছেন, সরকারবিরোধী এতগুলো সমাবেশের ফলে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা তাঁদের দখলে থাকবে। দেশি-বিদেশিরাও বিএনপির জনসমর্থন দেখতে পাবে। সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার পর এ ধরনের বড় জমায়েত নেতাকর্মীদের পরবর্তী কর্মসূচি পালনে উদ্বুদ্ধ করবে বলে মনে করেন তাঁরা।
পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে জামায়াত সমাবেশ করলে তাতে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। আজ ঢাকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সমাবেশ নিয়ে জনমনে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ দুজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, মহাসমাবেশ থেকে দু-এক দিন বিরতি দিয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী পদযাত্রা অথবা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ সচিবালয়, আবার অনেকে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। ওই সব কর্মসূচিতে সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করে পর্যায়ক্রমে আরো কর্মসূচি আসবে।
নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ভিড়
মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল সকাল থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। সন্ধ্যার দিকে এই ভিড় আরো বেড়ে যায়। এসব নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। রাত ৮টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সহস্রাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। তবে হ্যান্ড মাইকে চলাচলের জন্য রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্যও বিএনপির পক্ষ থেকে অনুরোধ করতে দেখা গেছে।
অন্যুদিকে, দুপুর ২টার দিকে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সমন্বয়ে সম্পৃক্ত একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজনে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে এ সমাবেশ হবে। ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে সমাবেশে ১০ লাখ লোক আনার লক্ষ্য নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দলের এমন প্রস্তুতির মধ্যে বিএনপি যদি রাজপথ দখলের চেষ্টা করে, তাহলে আজ ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে এখন পর্যন্ত সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বিএনপি সমাবেশ শেষ করে চলে যাবে, রাজপথ দখলের চেষ্টা করবে না। সেভাবেই বিএনপির প্রস্তুতি চলছে। তবে রাজনীতিতে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত আসে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাজপথে বিএনপিকে ঠেকানোর জন্য সাংগঠনিক বড় প্রস্তুতি রেখেছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেব না। কিন্তু কেউ সন্ত্রাসের চেষ্টা করলে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে আমাদের নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকবে।’
ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা কারা কোন পথে
ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেসব নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিতে আসবেন তাঁদের জন্য রুট নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এ রুট নির্ধারণ করা হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর, গাজীপুর জেলা, নরসিংদী জেলা ও উত্তরা এলাকার নেতাকর্মীদের বহনকারী গাড়িগুলো বনানী, মহাখালী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট হয়ে শাহবাগ থেকে টিএসসি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পার্কিং করা হবে। এসব এলাকার নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নেমে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেবেন।