Search

এমটিএফইর ফাঁদে সর্বস্বান্ত কেশবপুরের ২ হাজার গ্রাহক

কামরুজ্জামান রাজু, কেশবপুর (যশোর): অনলাইন ট্রেডিংভিত্তিক অ্যাপ ‘মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এমটিএফই) ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে যশোরের কেশবপুর উপজেলার প্রায় ২ হাজার গ্রাহক। এ সব গ্রাহকেরা প্রায় ১০ কোটি টাকা হারিয়ে এখন করছে হাহাকার। দ্রুত ধনী হওয়ার লোভে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অনলাইনের ফাঁদে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেলেও ‘লোকলজ্জায়’ মুখ খুলতে চাইছেন না। আবার কেউ কেউ টাকা খোয়া যাওয়ার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।


এমটিএফইর ফাঁদে সর্বস্বান্ত কেশবপুরের ২ হাজার গ্রাহক

কেশবপুর শহরের টাইগার মোড়ের পাশের একটি পঞ্চম তলা ভবনের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে এমটিএফই’র এ অঞ্চলের সিইও সাতক্ষীরা জেলার জামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি অফিস খোলা হয়। জামাল হোসেন কেশবপুরের স্বর্ণপট্টি এলাকায় জুয়েলারি ব্যবসা করতেন। তার হাত ধরেই এ উপজেলায় এমটিএফই’র কার্যক্রম শুরু হয়। ওই অফিসে বিভিন্ন সময়ে জাকজমকপূর্ণভাবে সভা-সেমিনার করে এমটিএফই অ্যাপে ‘ইনভেস্ট’ করতে মানুষদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হতো।
এ উপজেলায় এমটিএফই’র টিম লিডার ছিলেন- কেশবপুর বাহারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার মুফাসসির সদরুল হক, শহরের সাকিব গার্মেন্টেসের পরিচালক মাহাবুর রহমান, নূর গার্মেন্টেসের হাসানুর রহমান, সাতবাড়িয়া এলাকার রবিউল ইসলাম, সাবদিয়ার আক্তারুল ইসলাম, শিক্ষক দীপংকর দাসসহ আরও অনেকেই। এদের একেকজনের টিমে গ্রাহক ছিল ৩০ থেকে ৪০ জন করে। তারাও আবার দ্রুত বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে অন্যদেরকে এমটিএফই অ্যাপে বিনিয়োগ করাতেন। ধারদেনা করে কিংবা গচ্ছিত টাকা দিয়ে ডলার কিনে ওই অ্যাপে বিনিয়োগ করেন শিক্ষক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, বেকার যুবক, শিক্ষার্থী, নারীসহ প্রায় ২ হাজার ব্যক্তি। তাদের সকলের অ্যাপে জমা হচ্ছিল ডলার। অনেকে ডলার তুলতেও পেরেছেন। তবে গত ১৭ আগস্ট এমটিএফই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতারণার শিকার হয়েছেন এ সব ব্যক্তিরা। প্রায় ১০ কোটি টাকা হারিয়ে এখন তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ধার নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই এখন গা ঢাকা দিয়েছেন।
এমটিএফই অ্যাপে বিনিয়োগকারীরা জানান, এই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলতে ২৬ ডলার (প্রায় ৩ হাজার) বিনিয়োগ করতে হতো। অ্যান্ড্রুয়েড মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপে ঢুকে মাঝেমধ্যে ক্লিক করা ছাড়া আর কোন কিছু করতে হতো না। তাতেই একাউন্টে ডলার জমা হতো। তেমন কষ্ট না করেই এ ভাবে টাকা ‘ইনভেস্ট’ করে ঘরে শুয়ে-বসে আয় করতে পারায় হুমড়ি খেয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অ্যাকাউন্ট খুলতে থাকেন। অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এমটিএফই অ্যাপ। তবে হঠাৎ সিস্টেম আপগ্রেডের কারণে টাকা উত্তোলন থমকে যায়। এখন অ্যাপের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
কয়েকজন বিনিয়োগকারী ও স্থানীয়রা জানান, গত এপ্রিল মাসে কেশবপুরে এমটিএফই অ্যাপে মানুষ টাকা বিনিয়োগ করে। প্রথম দিকে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন তারা মুনাফা পেয়েছেন। তাদের মুনাফা দেখে অন্যরা একাউন্ট খুলে এখন ‘ধরা’ খেয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে হাহাকার করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী জানান, ৫০ হাজার টাকা ধার করে তিনি এই অ্যাপে ইনভেস্ট করেছিলেন। লাভ তো দূরের কথা এখন উল্টো প্রতিষ্ঠানই তার কাছে আরও ৯৪০ ডলার পাবে। লাভের আশায় এমটিএফই-তে ঢুকে এখন তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গত দুই দিন ধরে তিনি ওই অ্যাপে ঢুকতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, সিঙ্গাপুর প্রবাসী কেশবপুরের এক ব্যক্তি বাড়ি ফিরে এই অ্যাপে ৯ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছিলেন। তার একাউন্টে ডলারের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ২৩ লাখ টাকা হয়েছিল। অ্যাপ বন্ধ হয়ে তিনিও এখন সর্বস্বান্ত। অতি লোভের কারণে তাদের এই অবস্থা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বর্তমানে এমটিএফই অ্যাপের কেশবপুরের সিইও জামাল হোসন ভাড়া নেওয়া ওই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া এই অ্যাপের টিম লিডাররা কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। যা হবার হয়েছে জানিয়ে অনেক ভুক্তভোগী ‘লোকলজ্জায়’ বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শুভ্র প্রকাশ দাস বলেন, এমটিএফই অ্যাপের মাধ্যমে মানুষ প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি বলে তিনি জানান।