একতরফা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় হাসিনার দল, অবশ্যই এটা ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের’ জয়: শিবসেনা
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনকে একতরফা নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের জয়কে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের জয়’ বলে মন্তব্য করেছে হিন্দুত্ববাদী শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) দল।

শিবসেনা এমন মন্তব্য করলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্বাচনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বললাম এবং সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করায় তাকে অভিনন্দন জানালাম। সফলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের জনগণকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এদিকে, আজ (মঙ্গলবার) শিবসেনা (ইউবিটি) মুখপত্র ‘সামনা’য় ‘হাসিনার জয়ের অর্ধসত্য’ শিরোনামে বলা হয়েছে- শেখ হাসিনার বিজয়কে গণতন্ত্রের সিদ্ধান্ত বলে মেনে নিতে হবে, কিন্তু প্রশ্ন হল, যে পরিবেশ ও পদ্ধতিতে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে তাকে কীভাবে গণতন্ত্র বলা যায়? শেখ হাসিনা শুধু এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নয়, গত কয়েক বছরে তার বিরুদ্ধে আরও অনেক বিষয়েও অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের অনেক নেতা ও হাজার হাজার কর্মীকে হাসিনা সরকার গ্রেফতার করেছিল।
নির্বাচনে বিরোধী দলের অবস্থান প্রসঙ্গে ‘সামনা’য় বলা হয়েছে, হাসিনার ঐতিহ্যবাহী প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ৭৮ বছর বয়সে জেলে পাঠানো হয়েছিল। তাই নির্বাচন বর্জনের পথে গিয়েছিল বিএনপি। তার সঙ্গে আরও ১৫টি রাজনৈতিক দলও নির্বাচন থেকে দূরে ছিল। এ সব বিরোধী দলের প্রধান আপত্তি ছিল, হাসিনা সরকারের এই নির্বাচন প্রক্রিয়া 'ভুয়া', এবং নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদের প্রতি সরকারি এজেন্সির অপব্যবহার প্রসঙ্গে শিবসেনা বলেছে, ‘হাসিনা সরকারের আমলে অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারি এজেন্সির প্রকাশ্যে অপব্যবহার হয়েছে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াতেও কারচুপি হয়েছে, এমন অভিযোগের বেড়াজালে পড়েছিলেন শেখ হাসিনা সরকার। মাত্র তিন মাস আগে বড় লংমার্চ করে সেখানকার মানুষ শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখিয়েছিল। একটি ইসলামী দেশে গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষায় লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, এটা ছিল এক অসাধারণ ছবি। কিন্তু দু’মাস আগে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে এমন ভীতিকর পরিবেশ থাকলেও এখন আবার একই সরকার দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশিদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে যেভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছেন, তাতে মনেই হচ্ছিল বাংলাদেশে এবারের সাধারণ নির্বাচন প্রতারণা প্রমাণিত হবে। এ কারণে অনেক বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছে। স্পষ্টতই, একতরফা নির্বাচনে হাসিনার দল আবার ক্ষমতায় এসেছে। অবশ্যই এটাকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের’ জয় বলতে হবে। এটাকে ‘সত্যের’ জয় বলা যাবে না।’
নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও ফল প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে শিবসেনা (ইউবিটি) বলেছে, ‘যে নির্বাচনকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৫টি রাজনৈতিক দল বর্জন করেছে এবং ৬০ শতাংশ ভোটার ভোটদান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাকে আপনি নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে বলবেন? এই নির্বাচনের ফলাফল কতটা নির্ভরযোগ্য হতে পারে? সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল গণতন্ত্রের আওতার মধ্যে রাখা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অপমানজনক হবে।’
মাত্র ৪০ শতাংশ ভোটার শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই অনুপাত ছিল ৮০ শতাংশ। এর মানে অর্ধেকেরও বেশি জনগণ হাসিনার সরকারের প্রতি অনাস্থা দেখিয়েছে। এটাই হাসিনার বিজয়ের ‘অর্ধসত্য’ বলে শিবসেনা (ইউবিটি) মুখপত্র ‘সামনা’য় মন্তব্য করা হয়েছে। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ভোট দেওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের কাছে জয়ের এই 'অর্ধসত্য' মেনে নেওয়া ছাড়া আর উপায় কোথায় বলেও মন্তব্য করা হয়েছে ‘সামনা’য়।#