Search

যশোর ফুলের রাজধানীতে ফুল উৎসব

রঙিন ফুলের রং লেগেছে ‘ফুলের রাজধানী’ খ্যাত যশোরের গদখালীর চাষিদের মধ্যে। ফুলের এ রাজধানীতে শুরু হয়েছে চারদিনব্যাপী ফুল উৎসব। আর এ উৎসব ঘিরে ফুলচাষিদের চোখে মুখে উৎসবের আনন্দ।


যশোর ফুলের রাজধানীতে ফুল উৎসব
  1.  

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে গদখালীর পানিসারা ফুল মোড়ে ফিতা কেটে, বেলুন উড়িয়ে এ ফুল উৎসবের উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। 

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার খুলনা বিভাগের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত, স্থানীয় সরকার যশোরের উপ-পরিচালক রফিকুল হাসান, নাভারণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান, ঝিকরগাছার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভুইঁয়া, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন।

অনুষ্ঠান শেষে জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, গদখালী পানিসারার মাটি অনেক মূল্যবান। এ মাটিতে যা ফলে তা অন্য কোথাও ফলে না। এখানে আমরা গত বছরের ন্যায় এবারও ফুল উৎসবের আয়োজন করেছি। গতবার আমরা তিনদিনের মেলার আয়োজন করেছিলাম তবে এবার চারদিন করেছি। আগামীতে সাতদিনব্যাপী মেলার আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা এই ফুল সেক্টরকে সারাদেশ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। এখানে যাতে একটি পর্যটনের পরিবেশ তৈরি করা যায় সেজন্য জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। 

বৈচিত্র্যময় এই ফুলের রাজ্যকে দেশ এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। গদখালীর গোটা এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন দোল খাচ্ছে জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনিগন্ধা, হলুদ গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকাসহ প্রায় ১১ ধরনের ফুল। বাতাসে ফুটন্ত ফুলের সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে।

ফুল উৎসব ঘিরে ভালো বেচাকেনা হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা। মেলা প্রাঙ্গণে প্রত্যেক চাষিই এক বা একাধিক ফুলের স্টল সাজিয়েছেন। কৃষি বিভাগের দাবি ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে গদখালী থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, সারাদেশ এবং বিশ্বের কাছে এই ফুল সেক্টরকে তুলে ধরতে আমাদের এই ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ ফুল বিদেশে রপ্তানির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সারাবছরের মধ্যে এই শীত মৌসুমকে ঘিরে বড় ধরনের বাজার ধরার চেষ্টা করেন কৃষকরা। তারই ধারাবাহিকতায় ফুল উৎসবকে ঘিরে এই গদখালী থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হবে বলে আমরা ধারণা করছি। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে গোলাপের চাষ সব থেকে বেশি হয়েছে। প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ হেক্টর জমিতে নানা রঙের গোলাপের চাষ হয়েছে। সারাদেশের মোট ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ যশোরের ফুল সেক্টর থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

গদখালীর পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, ফুল উৎসব মানে আমাদের উৎসব এবং গোটা যশোরবাসীর উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে আমরা ভালো বেচাকেনার আশা করছি। আজ থেকে মেলায় ফুল তুলে বিক্রির পালা।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি থাকে, প্লাস্টিকের ফুলের ব্যবহার এবং আমদানি বন্ধ করা। এবছরও আমাদের একই দাবি।

ফুলচাষি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, মেলায় আমাদের দোকান রয়েছে। ভোরে ফুল তুলে দোকান সাজিয়েছি। অনেক দূর থেকে দর্শনার্থীরা এসে ফুল কিনছে, ভালো বেচাকেনাও হচ্ছে। গতবছরও আমাদের ভালো বেচাকেনা হয়েছিল।

যশোর শহর থেকে পরিবার নিয়ে ফুলের মেলায় এসেছেন মামুন হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতবারও ফুল উৎসবে এসেছিলাম, এবারও এসেছি। এই ফুল উৎসব যশোরবাসীর জন্য আরেকটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। 

এদিকে ফুল উৎসব ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ফুল উৎসব ঘিরে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আজ থেকে ফুল উৎসব শুরু হয়েছে। ফুল উৎসবকে ঘিরে দূরদূরান্তের দর্শনার্থীদের আগমন ঘটবে এবং ফুলচাষিদের বেচাকেনাও ভালো হবে। যশোরের ঐতিহ্য এবং এই ফুলের রাজধানীকে সবার সামনে এ ফুল উৎসবের মাধ্যমে তুলে ধরা আমাদের মূল লক্ষ্য। এবার ফুল উৎসবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৬টি স্টল দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পানিসারা ফুল মোড় এলাকার বিভিন্ন দোকানে ফুলের মেলা বসবে।