Search

মেয়েকে বাঁচাতে কিডনি বিক্রি করতে চান বাবা-মা

মেয়ের চিকিৎসা ও ঋণ পরিশোধ করতে কিডনি বিক্রির হাতে লেখা একটি বিজ্ঞপ্তি টানিয়েছেন এক দম্পতি। নবীউল্লাহ ও জাহানারা বেগম নামে অসহায় এ দম্পতির কিডনি বিক্রির লিফলেট ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। অনেকে সেটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শেয়ার করছেন। কেউ আবার নিজে পোস্ট করে অসহায় দম্পতিকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।


মেয়েকে বাঁচাতে কিডনি বিক্রি করতে চান বাবা-মা

নবীউল্লাহ ও জাহানারা দম্পতি পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের দক্ষিণ তালমা ডিয়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা।

কিডনি বিক্রির লিফলেটে লেখা রয়েছে, মহান রাব্বুল আলামীন আমাকে যে বিপদ দিয়েছে, এ রকম বিপদ যেন না দেয় মানুষকে। আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করে দেবেন। আমি জানি জীবিত অবস্থায় মানুষের শরীরের যে কোনো অংশ বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বাঁচার কোনো রাস্তা পাইনি। তাই দুটি কিডনি বিক্রি করতে চাই। এসব লেখার নিচে স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করেছেন তারা। 

জানা যায়, এ দম্পতির ১৮ বছর বয়সী মেয়ে নিতু আক্তার জন্মের থ্যালাসেমিয়ায় ভুগছেন। ১৩ মাস বয়স থেকে তিনি এ রোগে আক্রান্ত। অসুস্থতার কারণে প্রায় সময় ঘরবন্দির থাকতে হয় তাকে। নিতে  হয় নিয়মিত রক্ত। ইচ্ছে থাকার পরও অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করতে পারেনি নিতু। নিতুর ভাই জিহাদও ভুগছেন অ্যাজমাতে।

মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করেছেন নবীউল্লাহ। জন্মের পর থেকেই চালিয়ে আসা চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে নিয়েছেন প্রায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু ঋণ নিয়েও মেয়েকে সুস্থ করতে পারছেন না। নিজের ভিটেভাটি বিক্রি করে এখন বাধ্য হয়ে বসবাস করতে হচ্ছে অন্যের জমিতে। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তারা।

এদিকে এখন টাকার অভাবে থমকে যাচ্ছে মেয়ের চিকিৎসা। অপরদিকে ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন এ দম্পতি। ফলে নিজেদের কিডনি বিক্রি করতে চাইছেন তারা। মেয়ের চিকিৎসা আর ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তায় হার্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদেরও। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেভাবে কাজও করতে পারছেন না বাবা নবিউল্লাহ।

ফলে উপায়ন্তর না পেয়ে এলাকার ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন দেওয়ালে কিডনি বিক্রির লিফলেট লাগিয়ে অপেক্ষা করছেন কিডনির বিক্রির টাকায় মেয়ের চিকিৎসা আর ঋণের দায় থেকে মুক্তি পেতে। তবে মেয়ের চিকিৎসা করাতে কিডনির বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে হতভম্ব হয়েছেন অনেক স্থানীয়রা। এখন সেই বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিকযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

নিতু আক্তার জানান, আমি জন্মের পর থেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুগছি। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো আমি চলাফেরা করতে পারি না। আমার একটি স্বপ্ন ছিল যে, যদি সুস্থ স্বাভাবিক হতাম। পড়ালেখা করতাম। তাহলে ডাক্তার হতাম আমি। এভাবেই ভারাক্রান্ত কণ্ঠে নিজের স্বপ্নের কথা জানায় নিতু আক্তার। তার চোখে স্বপ্ন থাকলেও নিজের অসুস্থ আর পারিবারিক দারিদ্রতায় থমকে যাচ্ছে স্বপ্ন।

নিতুর মা জাহানারা বলেন, মেয়েটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। কয়েক বছর পর পেটে টিউমার ধরা পড়ে নিতুর। এরপর তা অপারেশন করে অপসারণ করা হয়। অভাবের সংসারে পরে আর চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। একদিকে মেয়ে অসুস্থ আরেকদিকে ঋণের চাপ। কুলাইতে না পেরে দুই স্বামী-স্ত্রী দুইটি কিডনি বিক্রি করতে চাচ্ছি।

প্রতিবেশীরা জানান, পরিবারটি মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। অনেক সময় না খেয়েও দিন পার করছে তারা। যদি সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসতেন তাহলে উপকৃত হতো পরিবারটি। ।

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো.সাবেত আলী বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আমরা চেষ্টা করছি পরিবারটির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।