পৃথিবীর ইতিহাসে গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তিকে নির্বাচনে আনার নজির নেই: হাসনাত
পৃথিবীর ইতিহাসে গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তিকে পুনরায় নির্বাচনে আসার সুযোগ দেওয়ার নজির নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

তিনি বলেছেন, “আপনারা আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেননি। এখন পর্যন্ত যে বা যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে তাদের এর মূল্য দিতে হয়েছে। যদি ১০টা ফেরাউন আর ১০টা নমরূদ একসঙ্গে করা হয় তাও হাসিনার সমান হবে না।
“আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হলে আমার-আপনার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন হাসনাত।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলেন তাকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীদের ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এরপর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে, পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয় আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।”
“সবকিছু হবে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র কাঠামোর বাইরে রেখে”-এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা ও আদর্শ এদেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে।”
বিচার করতে পারলে আগামী ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ফিরতে পারবে না উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, “এনসিপি যতদিন আছে আওয়ামী লীগকে এদেশে পুনর্বাসন করার সুযোগ দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের বিচারের মধ্য দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।”
“আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের অংশ” যোগ করেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক।
তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্টের পর ভারতের হাতে থাকা আওয়ামী লীগের সুতা আমরা কেটে দিয়েছি”
হাসনাত আবদুল্লাহ প্রশ্ন রেখে বলেন, “যারা আওয়ামী লীগকে রেখে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলেন তাদের আমরা প্রশ্ন করতে চাই, ২০১৪ সালে যখন ৫৩ আসনে ভোট হয়নি তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিলো? ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছিল তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল? ২০২৪ এ ডামি নির্বাচন হলো তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল?”
তিনি বলেন, “যেই দেশে দুই হাজার মানুষের রক্তের দাগ শুকায়নি, সেই দেশে আওয়ামী লীগকে ফিরতে দেওয়া যাবে না। যে বাংলাদেশে শাপলা, পিলখানা, ভারতীয় আগ্রাসনের বিচার, আবরার হত্যাকাণ্ড, জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার হয় নাই সেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই।”
সেনাবাহিনীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা কোনো ইনস্টিটিউটের বিপক্ষে না। আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে সেগুলোকে আমরা ঠিক করতে চাই।”
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আপনাদের ওপর এখনো আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি আপনারা আমাদের আস্থার প্রতিদান দেবেন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আওয়ামী লীগ আর ফিরতে পারবে না। কিন্তু আপনারা যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করেন তাহলে আমাদের মতো মজলুমদের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।”
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, আমরা এখনো কিছুই পাইনি। আপনারা এখনো আওয়ামী লীগের বিচার শুরু করতে পারেননি। আপনারা অতি দ্রুত বিচার কাজ শুরু করুন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করুন।”
বিক্ষোভ সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহিন সরকার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।