চৌগাছায় পটোলের কেজি ৪ টাকা
যশোরের চৌগাছায় শুক্রবার (৩১ মে) পটোল বিক্রি হয়েছে ৪ টাকা কেজিতে! অথচ গত বুধবার হাটের দিনে চৌগাছা বড় কাঁচাবাজারে একই পটোল পাইকারি ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিলো। তবে পাইকারি বাজারের মধ্যে অবস্থিত খুচরা বাজারে একই পটোল ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং ২০০ মিটার দূরের চৌগাছা খুচরা কাঁচাবাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

শুক্রবার দুপুর ও বিকেলে সরেজমিনে চৌগাছা সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের বড় কাঁচাবাজার এবং চৌগাছা খুচরা কাঁচাবাজারে গেলে এই দামে পটোল বিক্রি হতে দেখা যায়। এদিন সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চৌগাছা শহরে প্রবেশের চারটি প্রধান সড়কে পটোল বোঝাই ভ্যান, ইজিবাইক ও আলমসাধু সারি দিয়ে দাড়িয়ে থাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
বাজারের আড়ৎদার, খুচরা বিক্রেতা ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার চৌগাছা বড় কাঁচাবাজারে চাহিদার তুলনায় বিপুল পরিমান বেশি পটোল বিক্রি করতে নিয়ে আসেন কৃষকরা। সুযোগ বুঝে বাইরের ব্যাপারিরা (চৌগাছা থেকে ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালি, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সবজি বিক্রেতা) পটোল কম মূল্যে ক্রয় করতে থাকেন। সকালের দিকে যে পটোল ৮ টাকা করে কেজি ছিলো, সেই পটোলই জুম্মার আগে ও পরে ৪ থেকে ৫ টাকা করে কিনতে থাকেন ব্যাপারিরা। পচনশীল কাঁচা সবজি হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপারিদের দেয়া দামে বিক্রয় করতে বাধ্য হন।
চৌগাছার চাঁদপাড়া গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম ডাবলু বলেন, ‘৩ মণ পটোল নিয়ে এসেছিলাম। ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, গত বুধবারেও এই পটোল ১৮ থেকে ২০ টাকা করে বিক্রি করেছিলাম।’
আরেক কৃষক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ১৮ কাঠা জমিতে পটোল চাষ করেছি। ১৮৫ কেজি পটোল নিয়ে এসেছিলাম। ৫ টাকা করে কেজি বিক্রি করেছি।
তিনি আরো বলেন, আজ প্রায় ৫ মণ পটোল অন্যদিনের এক মণ পটোলের দামে বিক্রি করতে হলো। এই পটোল আনতে ভ্যান ভাড়াই দিতে হয়েছে ১৩৫ টাকা।
চৌগাছা বড় কাঁচাবাজারের আড়ৎদার মুকুল হোসেন জানান, সারাদিনে আমার আড়তে আট হাজার ১৩৭ কেজি পটোল বিক্রি হয়েছে। ৮ টাকা থেকে বিক্রি শুরু হয়ে শেষে ৫ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেছি বলেও জানান তিনি।
মুকুল হোসেন আরো বলেন, গত সোমবার ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রবিবার থেকে সোমবার সারাদিন ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় বেশিরভাগ চাষী পটোল উঠাননি। অনেকে গত বুধবারও পটোল বাজারে তোলেননি। যার চাপ আজ বাজারে পড়েছে। প্রচুর পরিমান পটোল এসেছে বাজারে। গোটা বাজারে আজ প্রায় ২০০ ট্রাক পটোল বিক্রি হয়েছে। যার এক ট্রাকে ৩৫০ মণ পটোল লোড হয়। এতো বেশি পটোল বাজারে আসায় পাইকারি ব্যাপারিরা অল্প দামে পটোল কিনেছে।
চৌগাছা থেকে চট্রগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে পটোল বিক্রেতা (ব্যাপারি) নারায়ন চন্দ্র বলেন, আজ ৫, ৬ ও ৭ টাকা দরে প্রায় ৫০ টন পটোল কিনেছি। চারটি ট্রাকে করে এই পটোল নিয়ে যাবো, এখন ট্রাকে লোড চলছে।
আজ বাজারে প্রচুর পটোল আমদানি হয়েছে তাছাড়া মার্কেটে পটোলের চাহিদা কিছুটা কম এজন্য পটোলের দাম কম বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে চৌগাছা পাইকারি বাজারের মাঝেই অবস্থিত খুচরা বাজারে পটোল ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর পাইকারি বাজার থেকে ২০০ মিটার দূরের চৌগাছা খুচরা বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে পটোল বিক্রি হতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খুচরা বিক্রেতা জানান, ৪ থেকে ৮ টাকা করে পাইকারি ক্রয় করেছি এটা ঠিক। তবে বাজরের খাজনা, জায়গার ভাড়া এবং আমাদের মজুরি ও ইনভেস্টের লাভ হিসেব করলে ২০ টাকা বিক্রি করলেও লস হয়। তাছাড়া কাঁচামাল অনেক সময় নষ্টও হয়ে যায়। এজন্য সেটা আগেই বেশি দামে বিক্রি করে পুষিয়ে নিতে হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুবাশির হুসাইন বলেন, চৌগাছায় চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমান পটোলের চাষ হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় রেমালের কারণে সোমবার পটোল তুলতে না পেরে শুক্রবার বিপুল পরিমানে পটোল উঠিয়েছেন চাষীরা। এজন্য হঠাৎ করে পটোলের দাম কমে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। চাষী যেনো ন্যায্য মূল্য পায় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।