চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় অনুসারীদের হামলা, আইনজীবী নিহত
চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।

এসময় আন্দোলনকারীদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত আটজন।
মঙ্গলবার বিকালে আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রঙ্গম কনভেনশন হলের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা নাম জালাল উদ্দিন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান।
চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ অ্যাডভোকেট এনামুল জানান, সাইফুল ইসলাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।
চমেক হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে সংঘর্ষের ঘটনায় ৭-৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে চিম্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। সড়কপথে আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) আলোচিত এই সংগঠককে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পাঠানো হয়। সোমবার রাতে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মহানগর ষষ্ঠ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণকে। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে চিন্ময় কৃষ্ণকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।
এদিকে চিন্ময়কে চট্টগ্রামে আনার খবরে এদিন সকাল থেকেই আদালত এলাকায় জড়ো হতে থাকেন তার অনুসারীরা। আদালত জামিন না মঞ্জুরের আদেশ দিলে চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীরা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা প্রিজনভ্যান আটকে দেন। পরে পুলিশ ও বিজিবি মিলে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারী। দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত এলাকায় মসজিদ-দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালান। বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অন্য একটি গোষ্ঠীর মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সহিংসতা শুরু হয়। এতে সাইফুল ইসলাম আলিফ গুরুতর আহত হন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হামলা-সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিদের চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বর্তমানে ওই এলাকায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। লালদীঘি এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।