Search

এইচএমপি ভাইরাস: দেশের বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি, ৭ নির্দেশনা

চীনে ছড়িয়ে পড়া হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। এই অবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব স্টেকহোল্ডারকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।


এইচএমপি ভাইরাস: দেশের বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি, ৭ নির্দেশনা

সোমবার এক লিখিত চিঠিতে এ তথ্য জানান শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম।

চিঠিতে তিনি লেখেন, এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বা উদ্বেগের কোনো তাৎক্ষণিক কারণ নেই। সচেতনতা বজায় রাখা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করলে এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। 

>শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগসমূহ হতে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।

>>হাঁচি ও কাশির সময় গামছা বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন।

>>ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।

>>আক্রন্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।

>>ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোন (অন্তত ২০ সেকেন্ড)

>>অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না।

>>জ্বর, কাশি এবং শাসকষ্ট আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন। প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) ইউনিট পরিস্থিতির ওপর সর্তক দৃষ্টি রাখছে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এইচএমপিভি অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগের মতো ফ্লু-এর উপসর্গ সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তাই আতঙ্কিত হওয়ায় কিছু নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব স্টেকহোল্ডারকে এইচএমপি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

স্টেকহোল্ডারদের জন্য নির্দেশনা

প্রয়োজনে বিমানবন্দর প্রাঙ্গণে সমস্ত যাত্রী, কর্মী ও দর্শনার্থীদের ফেস মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে উৎসাহিত করা। জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো এইচএমপিভির যেকোনো লক্ষণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে শাহজালালের স্বাস্থ্য বিভাগে রিপোর্ট করা।

বিমান সংস্থাগুলোর জন্য নির্দেশনা

ভ্রমণের উৎসস্থলে, বিশেষ করে সন্দেহভাজন দেশগুলো থেকে আগত ফ্লাইটগুলোর জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যদি কোনো যাত্রীর মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয় অথবা ফ্লাইটে কোনো সন্দেহজনক রোগী থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে শাহজালালের স্বাস্থ্য ইউনিটকে অবহিত করা। কেবিন ক্রু ও যাত্রীরা নির্দেশিকা সম্পর্কে অবগত আছেন কিনা, তা নিশ্চিত করা।

স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য নির্দেশনা

সন্দেহজনক লক্ষণযুক্ত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। এসব বিষয় নিশ্চিত করার জন্য স্টেকহোল্ডারদের সহায়তা ও তথ্য প্রদান করা।

চিঠিতে আরও লেখা হয়, রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এই ভাইরাস ফ্লুর মতো অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে, যা সাধারণত ২-৫ দিনের মধ্যে সেরে যায়। অতএব, আসুন আমরা আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকি। সবাইকে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করার এবং নিরাপদ থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

এর আগে রবিবার দেশে এক নারীর শরীরে এইচএমপি ভাইরাস শনাক্ত হয়। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত। যদিও এখন তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।

এদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে এইচএমপি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং তীব্রতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে ১৪ বছরের কম বয়সি শিশু এবং ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়।

সেইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন— হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী মহিলা এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।

অধিদপ্তর বলছে, অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। চীন ও অন্যান্য দেশে এর প্রাদুর্ভাবের ফলে বাংলাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক। এর জন্য সকল যন্ত্র সেবাকেন্দ্র এবং পয়েন্টস অব এন্ট্রিগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি জোরদার করা প্রয়োজন।

এমন প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কয়েকটি নির্দেশনা অনুসরণ করার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সংক্রমণ প্রতিরোধে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর